টেলিনর ইয়ুথ ফোরামের বাংলাদেশ পর্ব শেষ হয়েছে গত ২৪ সেপ্টেম্বর। এতে নির্বাচিত হয়েছে দুটি নতুন উদ্যোগের ধারণা। উদ্যোগগুলো হচ্ছে ‘প্ল্যাটফর্ম মুক্তি’ ও ‘মেক দেম স্ট্রং’।
ম্যা মো খাইংয়ের উদ্যোগ প্ল্যাটফর্ম মুক্তি কাজ করবে যাতায়াতে নারীর নিরাপত্তা নিয়ে। ম্যা মো খাইং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ) ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে স্নাতক শ্রেণিতে পড়াশোনা করছেন।
নির্বাচিত অন্য উদ্যোগ মেক দেম স্ট্রং শরণার্থীদের শিক্ষা দেবে। ঢাবির তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল (ইইই) বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব রহমানের উদ্যোগ এটি।
এই দুই তরুণ চলতি বছরের ডিসেম্বরে নরওয়েতে অনুষ্ঠেয় টেলিনর ইয়ুথ ফোরামের চূড়ান্ত পর্বে অংশ নেবেন। চূড়ান্ত পর্বে অংশ নিতে তাঁরা যখন নরওয়েতে থাকবেন, সে সময় চলতি বছরের নোবেল বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়ার কথা। নোবেল পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সুযোগও পাবেন তাঁরা।
নোবেল পিস সেন্টার (এনপিসি) ও টেলিনর গ্রুপ টেলিনর ইয়ুথ ফোরামের আয়োজক। ১৩টি দেশে আয়োজন করা হয় এই প্রতিযোগিতা। ১৮ থেকে ২৮ বছরের তরুণ-তরুণীরা এতে অংশ নিতে পারেন। চলতি বছরের মে মাসে শুরু হয়েছিল টেলিনর ইয়ুথ ফোরামের বাংলাদেশ পর্ব। চূড়ান্ত পর্বের জন্য নির্বাচিত দুই উদ্যোগের কথা থাকছে এই প্রতিবেদনে।
প্ল্যাটফর্ম মুক্তি
ওয়েবসাইট, অ্যাপ্লিকেশন (অ্যাপ) ও ফোনের হটলাইন—এই তিন মাধ্যমে সেবা দেবে প্ল্যাটফর্ম মুক্তি, বললেন ম্যা মো খাইং। কী সেবা? বাসার বাইরে বেরোবেন, তার আগেই ঘরে বসে জেনে নেওয়া যাবে কোন রাস্তার কী অবস্থা। এতে যাত্রী কোন রাস্তা ব্যবহার করবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
মূলত প্ল্যাটফর্ম মুক্তির অ্যাপে বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন দেখে ব্যবহারকারীরা সড়কের অবস্থা জেনে নিতে পারবেন। অ্যাপটির সঙ্গে যুক্ত থাকবে গুগল ম্যাপ। যাঁদের স্মার্টফোন নেই, তাঁরা হটলাইনে কল করে তথ্য জেনে নিতে পারবেন। এ ছাড়া ওয়েব সংস্করণও থাকবে।
এখনো ধারণা পর্বেই রয়েছে এ উদ্যোগ। ম্যা মো খাইং বলেন, আপাতত তাঁদের ভাবনা টেলিনর ইয়ুথ ফোরামের চূড়ান্ত পর্ব ঘিরে। সেই প্রস্তুতিই নিচ্ছেন। ধারণাটিকে কীভাবে আরও উন্নত করা যায়, এসব নিয়ে কাজ চলছে। বিনিয়োগ পেলে পরবর্তী ধাপের কাজ শুরু করবেন। বললেন, ‘আমি বিতর্ক করি, তাই প্রতিযোগিতা থাকলে অনেক সময় বাসায় ফিরতে দেরি হতো। এতে ঘরে সবাই দুশ্চিন্তা করত। এ ছাড়া আমাদের দেশে মেয়েদের বাইরে বেরোনো নিয়ে পরিবারের মধ্যে একটা দুশ্চিন্তা থাকেই। তাই এমন কিছু করতে চাইছিলাম, যাতে নারীরা বেরোনোর আগেই জানতে পারেন, তাঁদের জন্য কোন রাস্তাটি তখন নিরাপদ। যাতে দ্রুত ও সহজেই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন।’
রাস্তায় কোনো ধরনের বিপদ হলেও তাদের অ্যাপ কিংবা হটলাইন ব্যবহার করে সাহায্য চাওয়া যাবে। যোগাযোগ করতে পারবে নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনেও।
মেক দেম স্ট্রং
সিরিয়ার ছোট্ট শিশু আইলান কুর্দির কথা নিশ্চয় মনে আছে? বছর দুয়েক আগে যার ছবি পুরো বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছিল। তাদের মধ্যে রাকিব রহমানও একজন। তখন থেকেই রাকিব ভাবতে থাকেন শরণার্থীদের জন্য কিছু করার। আর সেটি যেন দীর্ঘ মেয়াদে শরণার্থীদের জন্য সুফল বয়ে আনে। ভাবতে ভাবতে একসময় পেয়েও যান, এমনটাই বললেন তিনি। কী সেটি? বললেন, মাল্টিমিডিয়া কনটেন্টের মাধ্যমে শরণার্থীদের শিক্ষা দেওয়া হবে। সেটি অবশ্য অনলাইন কোনো মাধ্যমে নয়। এর কারণ হিসেবে বলেন, যেহেতু তাঁদের কাছে সে ধরনের প্রযুক্তি না-ও থাকতে পারে, যার মাধ্যমে পাঠ নেবে। তাই সরাসরি শরণার্থী ক্যাম্পে গিয়ে পাঠদান করা হবে।
রাকিব বলেন, মেক দেম স্ট্রং হবে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। যে কেউ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে এতে কাজ করতে পারবেন। দূরে থাকলেও মাল্টিমিডিয়া পাঠ্যবই বানিয়ে তাদের কাছে পাঠাতে পারবে। কিন্তু কেমন কনটেন্ট তাঁরা শরণার্থীদের কাছে দেবেন? তাঁর জবাব ছিল, ‘শুধু আমাদের দেশে নয়, পুরো বিশ্বেই শরণার্থীরা ছড়িয়ে পড়ছে। তাই আমরা আমাদের কার্যক্রম বিশ্বজুড়েই ছড়িয়ে দিতে চাই। এ জন্য শরণার্থীরা যে দেশের হবে, তাদের দেশের পাঠক্রম অনুযায়ী এবং তাদের ভাষায় পাঠদান করা হবে। তাই সেসব ভাষায় দক্ষ এবং পাঠক্রম অনুযায়ী পাঠদান যাতে করতে পারে, সে জন্য ওই সব দেশের স্বেচ্ছাসেবক চান তাঁরা। তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে মেক দে স্ট্রং। দেশে আসা রোহিঙ্গাদের পাঠ দিয়ে তাঁরা তাদের কার্যক্রম শুরু করবে।
Leave a Reply